অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তা ভালো আইডিয়া পেলেই ব্যবসার মতো প্রতিযোগিতায় নামার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু একটি ভালো আইডিয়াই কি লাভজনক ব্যবসা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট? না, যথেষ্ট নয়।
ব্যবসায়িক জগতে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে গেলে নানা চড়াই-উতড়াই পেরোনোর মতো সক্ষমতা প্রয়োজন। নতুন ব্যবসা শুরু করার পর, নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করা অনেক বেশি জরুরি। সঠিকভাবে নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করতে না পরলে, ব্যবসায় লস হবার সম্ভাবনা ৯০%। আপনি যদি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান। তাহলে, সর্বপ্রথম আপনাকে একটি ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
যে কোন ব্যবসা শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করা। ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করা বেশি জরুরি হয়ে পড়ে, যদি আপনি ব্যবসার ফান্ডিং বাড়াতে চান। ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ এই ধাপগুলো যেন আপনি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন। তাই, আজকে আমরা নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করার জন্য কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেসব বিষয়গুলো নিয়ে আজকের এই লেখা। ব্যবসা পরিকল্পনা হল এমন একটি রোডম্যাপ যেখানে ব্যবসার বর্ণনা, পণ্য বা পরিষেবা দ্বারা কিভাবে অর্থ উপার্জন হবে, সেসব ধারণা, নেতৃত্ব এবং কর্মচারী, অর্থসংস্থান, ব্যবসার অপারেশন মডেল ব্যবসায় সাফল্যের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। যখন একজন ইনভেস্টর আপনার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করার জন্য আগ্রহী হবে তখন সে প্রথমে, আপনার ব্যবসা পরিকল্পনা এবং সেখানে যদি সে ভবিষ্যতে ভালো লাভের আভাস পায় তাহলে, সে আপনার কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবেন। এছাড়াও, আরো অনেক কারণ রয়েছে ব্যবসা পরিকল্পনার গুরুত্ব এর পেছনে। এ কারণে ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করা অনেক জরুরী। নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা করার প্রাথমিক ধাপ: ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি প্লেন তৈরি করতে হবে এবং কাগজে-কলমে আপনার প্ল্যান লিখে রাখতে হবে প্রথমে কারণ প্ল্যান পারফেক্ট হলে আপনার ব্যবসায় কোথায় লাভ করা যাবে তা আপনি বুঝতে পারবেন। প্লানের সাথে সাথে কতটুকু সময়, অর্থ, বা সংস্থান প্রয়োজন তা লিখে রাখতে হবে।
আপনার মাথায় যদি অনেক ব্যবসার আইডিয়া থাকে এবং আপনি বুঝতে না পারেন কোনটা শুরু করবেন তাহলে সবকটি আইডিয়ার জন্য ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন ব্যবসা আপনার জন্য সঠিক এবং বেশি লাভজনক। ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করার সময় আপনাকে research করতে হবে আপনার গ্রাহক এবং প্রতিপক্ষের সম্পর্কে এবং আরও research করতে হবে বাজার সম্পর্কে। আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা করার সময় আপনি ভেবে রাখতে পারবেন যে আপনি কি ধরনের কর্মচারী নিয়োগ দিতে চান এবং তাদের কি যোগ্যতা থাকতে হবে যা আপনার ব্যবসাকে লাভজনক করে তুলবে। ব্যবসা পরিকল্পনা করার সময় আপনি কার সাথে পার্টনারশিপ করতে চান এবং কোন কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপ করলে আপনার ব্যবসায় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং লাভজনক হয়ে উঠবে তা আপনি আগে থেকেই চিন্তা করে রাখতে পারেন। ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে আপনার প্রতিপক্ষ কোম্পানিগুলোর সম্পর্কে জানতে হবে এবং ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করার সময় আপনি তা লিখে রাখতে পারেন যে কোন প্রতিপক্ষ থেকে আপনার ব্যবসার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং সেসব প্রতিপক্ষের কোম্পানি থেকে আপনার কোম্পানি কিভাবে ভালো প্রমাণ করা সম্ভব। এ সকল জিনিস আপনি আপনার ব্যবসা পরিকল্পনা লিখতে পারবেন।
নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা এর প্রথম দিকে এই নির্বাহী সারসংক্ষেপ ব্যবহার করতে হয় কিন্তু পুরো ব্যবসা পরিকল্পনা শেষ করার পর আপনাকে এই নির্বাহী সারসংক্ষেপ লিখতে হবে। আপনি আপনার ব্যবসা পরিকল্পনায় কি কি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ব্যবহার করেছেন সেসব এই সারসংক্ষেপে লিখতে হবে। এখানে আপনি আপনার কোম্পানির বর্ণনা দিবেন এবং দুইটি প্রশ্নের উত্তর আপনাকে অবশ্যই দিতে হবে ব্যবসায়ের কাঠামো একক মালিকানা / সাধারণ অংশীদারিত্ব / সীমাবদ্ধ অংশীদারি / কোম্পানি, ব্যবসায়ের মডেল, শিল্পখাত, লক্ষ্য, ভ্যালু প্রপোজিশন, কোম্পানির ইতিহাস, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য দীর্ঘ / স্বল্প মেয়াদী, S.M.A.R.T ব্যবহার করুন নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, বাস্তববাদী এবং সময়সীমা, টিম মেম্বার নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে মার্কেট সিলেট করা। আপনাকে এমন একটি মার্কেট সিলেক্ট করতে হবে যেখানে অনেক গ্রাহক রয়েছে এবং যেখানে অনেক অপরচুনিটি রয়েছে। Market research and analysis সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনি যদি প্রথমে মার্কেট ভবন সিলেক্ট করেন তাহলে আপনার ব্যবসা শুরু করতে অনেক সমস্যা হবে। প্রথমে আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার মার্কেটটি কত বড় এবং সেখানে কি কি অপরচুনিটি রয়েছে। এর জন্য আপনি নিচের তিনটি কাজ করতে পারেন।
আপনাকে দেখতে হবে কোন কাস্টমারদের আপনি মেইনলি টার্গেট করবেন এবং আপনাকে এমন একটি ব্যবসা শুরু করতে হবে যা সব ধরনের এবং বয়সের মানুষকে আগ্রহী করবে। আপনাকে দেখতে হবে যে আপনি যেই ইন্ডাস্ট্রির মার্কেটে কাজ করতে চান সেই মার্কেটে কি ধরনের ট্রেন্ড চলে এবং কি করলে আপনার ব্যবসা অনেক দিন চলবে এবং বৃদ্ধি পাবে। আপনি কখনোই আপনার মার্কেট সম্পর্কে সব ইনফরমেশন সংগ্রহ করতে পারবেন না তাই আপনাকে বিভিন্ন ভেরিফাইড দাতা পয়েন্টস ব্যবহার করা মার্কেট সম্পর্কে ধারণা করে নিতে হবে। আপনি কিভাবে আপনার কোম্পানিকে ম্যানেজ করবেন এবং কি ধরনের কর্মচারী নিয়োগ দেবেন তার সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত চিন্তা করতে হবে। কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট যদি ভালো না হয় তাহলে কোম্পানি বেশিদিন টিকবে না। আপনার যদি ম্যানেজমেন্ট টিম থাকে তাহলে আপনি organizational chart ব্যবহার করবেন।
মার্কেটিং প্লান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনার নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা জন্য। আপনি কিভাবে আপনার পণ্য বাজারজাত করবেন এবং কিভাবে মার্কেটিং করবেন তার সবকিছু আপনাকে এখানে প্ল্যান করতে হবে। বেশিরভাগ মার্কেট প্লানে 4P’s ব্যবহার করা হয়। আপনার ব্যবসা পরিকল্পনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অর্থনৈতিক দিক চিন্তা করা। আপনার ব্যবসার জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে এবং সেই অর্থ আপনি কিভাবে ব্যবসায় ব্যবহার করবেন এসব চিন্তা করে ব্যবসা পরিকল্পনা করতে হবে। ব্যবসা পরিকল্পনা করার জন্য আপনি Microsoft Excel ব্যবহার করতে পারেন যেখানে আপনি আপনার ব্যবসার যাবতীয় খরচ লিখবেন। ব্যবসা করতে গেলে যেমন বাজার যাচাই করতে হবে, তেমনি আরও সুনির্দিষ্টভাবে ক্রেতা কেন এবং কীভাবে পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে তা অনুসন্ধান করতে হবে। আবেগ নতুন ব্যবসা পরিচালনা এবং কঠোর পরিশ্রম করার পেছনে চালকের ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্রেতার আকর্ষণবিন্দু না জানলে ব্যবসার সমাধান পাওয়া কষ্টকর হবে। পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনায় তাই এ বিষয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে।
লাভজনক ব্যবসা করার উপায় হলো প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা কিছু করা। প্রতিযোগিতার বাজারে সম্পূর্ণ নতুন ধারণা নিয়ে আসা খুব কঠিন। তবু একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করা যেতে পারে যা আইডিয়াতে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করে। এতে অন্যদের থেকে শুরুতেই এক ধাপ এগিয়ে থাকা যাবে। সময়ের সঙ্গে প্রবণতা, ব্যবসায়িক প্রত্যাশা এবং ব্যবসার প্রভাবও পরিবর্তিত হয়। এসব বিষয় মেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উদ্যোক্তার ব্যবসা ক্রেতাকে আগ্রহী করছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ক্রেতার মনস্তত্বের উপাদান যাচাই করতে হবে। ক্রেতা কী চাচ্ছে, কোন সুবিধা তাকে আকৃষ্ট করছে, কীসের অনুপস্থিতি হতাশ করছে ইত্যাদি অনুসন্ধান করার জন্য ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
শেষ কথা:
ব্যবসা শুরু করার আগে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। একটি ব্যবসা পরিকল্পনা আপনার ব্যবসার কাঠামো, লক্ষ্য, মার্কেট রিসার্চ, এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবসা শুরু করলে সাফল্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে। আপনি যেহেতু একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন, তাই আপনার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার প্রতিযোগীদের, মার্কেট, এবং ক্রেতাদের মনোভাব সম্পর্কে গভীরভাবে গবেষণা করবেন। সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনি নিজের ব্যবসাকে সফলভাবে পরিচালনা এবং সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।