বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, এবং পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনা এজন্য একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে কাগজের ব্যাগ বা ঠোঙ্গার ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কাগজের ব্যাগ তৈরি ব্যবসা এমন একটি উদ্যোগ, যা কম পুঁজি নিয়ে সহজে শুরু করা যায়। এটি শুধু পরিবেশের জন্য উপকারি নয়, বরং গ্রামীণ এলাকার নারী-পুরুষদের জন্য একটি আয়ের সুযোগ তৈরি করে দেয়। বারসিকের উদ্যোগে কলমাকান্দা, নেত্রকোনার নলছাপ্রা গ্রামে এই ব্যবসার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে অংশগ্রহণকারীরা হাতে কলমে কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙ্গা তৈরির কৌশল শিখতে পারে।

কাগজের শপিং ব্যাগের চাহিদা সব সময় থাকে। সব জায়গায় কাগজের ব্যাগ ব্যবহত হচ্ছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাগজের ব্যাগ অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়ে থাকে। এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাদের অর্ডার অনুযায়ী ব্যাগ তৈরি করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া মিষ্টি ব্যবসায়ী, কাপড় বিক্রেতা, কনফেকশনারি ও অন্য ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনমতো কাগজের ব্যাগ কিনে থাকেন। এছাড়া যে কোনো মার্কেটের সামনে এই ব্যাগ বিক্রি করতে পারেন। আসলে যে কোন ব্যবসাতেই সরকারী অনুমতির প্রয়োজন হয়। আজকাল অনলাইন ব্যবসা শুরু করার জন্যেও তো অনুমতি লাগে। তবে তোমার ব্যবসা যদি কোন বড় ই কমার্স সাইটে কোন একটা স্টোর নিয়ে শুরু করো তবে তোমার কোন সরকারী অনুমতির প্রয়োজন নেই।
অন্য দিকে যদি দোকান দাও বা নিজের ব্যবসার নামে ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে ব্যবসা চালাও তবে তোমাকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে তোমাকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতো স্থানীয় সরকার বিভাগে গিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করার জন্যেও অনুমতি নিতে হবে।


হাতুড়ি, পাঞ্চ মেশিন, গামলা, কাঁচি, ফরমা, কাঁচামাল, কাপড়, আঠা, সুতা, পিচবোর্ড বা শক্ত কাগজ, আইলেট, স্ক্রিন প্রিন্ট, সেলাই মেশিন, তারা প্রভৃতি। পঞ্চাশ কেজি ঠোঙ্গা বানাতে লাগবে তিন কেজি আটার সঙ্গে পানি মিশিয়ে আগুনে তাপ দিয়ে বানানো আঠা। দুই কেজি, দেড় কেজি, আধা কেজি ও পোয়া কেজি এই চার সাইজের ঠোঙ্গা বেশি চলে। তাই কাগজ কিনে যে ঠোঙ্গা বানাবেন তা মাপমতো কেটে নিতে হবে। আকার ঠিক রাখতে প্রয়োজনে বাজার থেকে নির্দিষ্ট মাপের একটা করে ব্যাগ বা ঠোঙ্গা সংগ্রহে রাখতে পারেন। ব্যাগ এর তলায় দেওয়ার জন্য সাইজমতো চারকোনা কাগজ কেটে নিতে হবে। একপাশে ব্যগের ও তলার কাগজ অন্যপাশে আঠা নিয়ে বসে যেতে হবে। সাইজ করা কাগজগুলো গোল করে দুই মাথা আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। অনেকটা পাইপের মতো দেখাবে। চাপ দিয়ে ভাঁজ করে ওজনদার কিছু দিয়ে চেপে রাখতে হবে। চেপে রাখা কাগজের ভাঁজ পড়া দুই পাশ আঙুলে চাপ দিয়ে পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হবে। এখন আড়াআড়ি দুই পাশ ভেতরের দিকে আর দুই পাশ বাইরের দিকে থাকবে। চারকোনা করে কেটে রাখা একটা কাগজ ভেতরের ভাঁজের ওপরে রেখে বাইরের দিকে থাকা কাগজ দুটি দিয়ে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। হয়ে গেল কাগজের ব্যাগ । এক শ করে ব্যাগ বেঁধে ফেললেই বিক্রি উপযোগী হয়ে যাবে।

এ ব্যবসায় তুলনামূলক কম পুঁজি। তাই কম রুপি বিনিয়োগ করে শুরু করা যায়। ইচ্ছে করলে পরিবারের সবাই মিলে ব্যবসাটি চালানো যায় তাই এতে করে কর্মীর দরকার হয় না। এ ব্যবসায় লাভ তুলনামূলক আনেক বেশি এবং সুবিধামতো স্থানে থেকে বিক্রি করা যায়। এছাড়াও নিজেই কোন দোকান নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। নিজে দোকান না নিলেও চলে কারণ পাইকার বা খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করা যায়। তাই শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় এ ব্যবসা করা যায়। যে কোন ব্যবসার শুরুতে প্রচারপ্রচারণা টাই আসল। তুমি যদি কাগজের ব্যাগ ব্যবসা শুরু করতে চাও তবে তোমার প্রচার প্রচারণা একদম অনালিন নির্ভর হওয়া দরকার। অন্যদিকে কোন দোকান দিয়ে শুরু করলে তুমি নিজস্ব মানুষদের কে বলে তাদের অর্ডার তোমার কাছে করাতে পারো। ব্যবসার নামে মাইকিং ব্যানার ও করা যেতে পারে। সেই সাথে অনালাইন ও সামাজিক যোগাযগ মাধ্যমেও প্রচার প্রচারণা চালানো যেতে পারে। আপনি সাধারণত কোন বাজার বা সুপার শপে অথবা স্কুল কলেজ পার মাদ্রাসার পাশে জনাকীর্ণ এলাকায় পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
তবে আপনি যদি পাইকারি বিক্রয় করতে চান তাহলে স্টেশনারি দোকানে সরবরাহ করতে পারেন এবং আশেপাশে যারা খাতা কলম বিক্রি করে তাদের কাছে বিক্রয় করতে পারেন। তাছাড়া শহরের রাস্তায় বিক্রি করতে চাই নিজে অথবা অন্য কারো মাধ্যমে বিক্রি করা যেতে পারে আপনার পণ্য নামের জন্য আপনি পন্যগুলো অন্যদের চেয়ে একটু কম দামে দিতে পারেন। এতে করে আপনার গ্রাহক বাড়বে আর গ্রাহক বাড়লে লাভও বাড়বে। বানানোর সময় ভাঁজটা ঠিকমতো দিতে হবে অন্যথায় এলোমেলো হলে ব্যাগটি সুন্দর হবে না। ব্যাগে যেসব অংশে আঠা লাগানো হয়, তা ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। ভালোমতো না শুকালে জোড়া দেওয়া জায়গার কাগজ খুলে যেতে পারে। ব্যাগের নিচে ও ওপরে শক্ত কাগজ লাগাতে হবে। নতুবা ছিঁড়ে যেতে পারে। পুঁজির বিষয়টা আসলে নির্ভর করে তুমি কত বড় করে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছ তার উপরে। যে কোন ব্যবসায় পুঁজি যত ইচ্ছে ততো বিনিয়োগ করা যায়। তুমি যদি সনাতন পদ্ধতিত্র প্রিন্টিং ব্যবসা চালু করতে চাও তবে ৫ হাজার রুপি পুঁজি বিনিয়োগ করলেই চলবে। অন্যদিকে যেকোন ধরনের একটা প্রিন্টিং মেশিন নিয়ে কাজ করতে চাইলে ১৫ থেকে ৫০ হাজার রুপি তোমাকে মেশিনের কোয়ালিটি ভেদে বিনিয়োগ করতে হতে পারে। এছাড়াও, তুমি নিজের ওয়েবসাইটে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে সেটার খরচা, দোকান বা কারখানা দিলে তার মাসিক ভাড়া যদি নিজস্ব না হয়ে থাকে এবং তোমার কর্মী রাখতে হলে তার বেতন লাগবে। অন্যদিকে তুমি মিডল ম্যান হয়ে এসব ঝামেলা না করে শুধু মাত্র একটা ওয়েবসাইট করে এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। সেক্ষত্রে তোমার কোন পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন পরবে না। যাইহোক, পাঁচ থেকে ১০ হাজার রুপি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে কাগজ কাটার মেশিন কিনলে খরচ বেশি পড়বে। কাঁচামালের দাম বিভিন্ন সময় কম-বেশি হয়।

গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শপিং ব্যাগ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যোগাযোগ ভালো হলে এ ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি করা যাবে। সঠিকভাবে করতে পারলে এই ব্যবসা ক্ষতির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ বাজারের চাহিদা অনুযায়ী করতে পারলে, বা কোনও প্রতিষ্ঠান বা বড় দোকানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে আপনার মাসিক উপার্জন নিশ্চিত হতে পারে৷ আপনি কত খাম তৈরি করে বিক্রি করতে পারছেন তার ওপর এই অঙ্ক অনেকটাই নির্ভর করছে৷। বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। কাগজের ব্যাগ তৈরি করা শেখার কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তবে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাগ তৈরির নিয়ম হাতে-কলমে শিখে নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ বিভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। ধৈর্যশীল হলে এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন। আপনি চাইলে পার্ট-টাইমে এই ব্যবসা করতে পারেন অথবা ফুল-টাইমও করতে পারেন৷ গ্রিটিংস কার্ডের জন্য খাম, বা ক্যুরিয়রের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাগ বা খাম, অথবা অফিস বা অনুষ্ঠানের জন্য, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন কাগজে তৈরি করা হয় ব্যাগ বা খাম৷ তাই সেই অনুযায়ী কাগজ কিনতে হবে৷ চাইলে ডিজাইনার খামও তৈরি করতে পারেন৷ এভাবে বাড়িতে বসেই কম পুঁজিতে আপনি আপনার নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন৷

শেষ কথা:

কাগজের ব্যাগ বা ঠোঙ্গা তৈরির ব্যবসা একটি লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হতে পারে, যা কম পুঁজিতে শুরু করা যায়। এটি শুধু পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক নয়, বরং গ্রামের নারী-পুরুষদের জন্য একটি আয়ের উৎস হতে পারে। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রচুর প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই, তবে অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে সহজেই শিখে নেয়া সম্ভব। যেহেতু কাগজের ব্যাগের চাহিদা সবসময়ই রয়েছে, সঠিক কৌশল এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে সহজেই ব্যবসাটি বাড়ানো সম্ভব। সঠিক যোগাযোগ এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করলে এই ব্যবসা দ্রুত লাভজনক হতে পারে, এবং এটি বিভিন্ন মার্কেট, দোকান বা অনলাইন মাধ্যমে বিক্রি করা সম্ভব।

Related Post