মানুষ লজ্জাস্থান নিবারণ ও শরীর ঢেকে রাখার জন্য পোশাক পরিধান করে। এই পোশাককে আরো একটু সৌন্দর্যমন্ডিত করতে বেশ কিছু জিনিস ব্যবহার করে থাকে। এরমধ্যে কোমর বন্ধনী বা বেল্ট এখন অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তরুণ ও অফিসিয়াল লোকদের জন্য এটা যেন না হলেই নয়।



বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি অনেক আধুনিক মেয়েরাও এটা ব্যবহার করা শুরু করেছে। বেল্ট ছাড়া অনেকেরই সাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কোনো উপলক্ষ ছাড়াই প্রতিনিয়ত মানুষ এটা ক্রয় করে থাকে। তাই বছরজুড়েই এর চাহিদা অব্যাহত থাকে। স্বল্প পুঁজিতে নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে যারা কোনো ব্যবসা শুরু করবেন বলে ভাবছেন, তাদের জন্য বেল্ট তৈরির ব্যবসাটা মন্দ নয়। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ বা কোন কারখানা থেকে হাতেকলমে শিখে আপনি দিতে পারেন বেল্ট তৈরির কারখানা। এই ব্যবসাটা দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত, আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে বেল্ট তৈরি করবেন অর্থাৎ নিজের ব্রান্ড। দ্বিতীয়ত, গ্রাহকদের কাছ থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে তাদেরকে তৈরি করে দিবেন। যদি নিজে ব্রান্ড তৈরি করতে চান তাহলে একটি নাম নির্বাচন করে ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এরপরে কিনতে হবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। জিনিসপত্রে পরিমাণটা ব্যবসার পরিধি ও পুঁজির ওপর নির্ভর করবে। বাসায় খালি ঘর থাকলেই বেল্ট তৈরির ছোট কারখানা করা যায়। তবে সেই ঘরটির সাইজ হতে হবে কমপক্ষে আট ফুট বাই আট ফুট। এছাড়া লাগবে চামড়া, রেক্সিন, আঠা, সেলাই মেশিন, বোর্ড কাগজ, ডাইস মেশিন ইত্যাদি। বেল্ট তৈরির জন্য দুই ধরনের প্রশিক্ষণ নেয় যায়। সরকারিভাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন তিন মাসের একটি কোর্স করায়। চাইলে সেখানে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। অথবা কোন কারখানায় কাজ করে বা তাদের সাথে মিশে বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন। আর বড় আকারে শুরু করতে চাইলে ভালো কারিগড় নিয়োগ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজের মৌলিক জ্ঞানটুকু থাকলেই চলবে। জিনজিরা, চকবাজার, ইসলামবাগ, যাত্রাবাড়ী, বিবির বাগিচা, সায়েদাবাদ, রায়েরবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আছে বেল্টের ছোট-বড় কারখানা। ব্যবসা শুরুর আগে বেচা-বিক্রি আর কাঁচামাল সংগ্রহের খোঁজখবর এসব কারখানা থেকেই নিতে পারেন।

সাধারণত সব রকমের কাঁচামাল পাওয়া যাবে সিদ্দিকবাজার, নবাবপুর, চকবাজার, বংশাল বা রাযেরবাজারে। মেশিন কেনার জন্য যেতে হবে ঢাকার বংশাল অথবা ধোলাইখালে। সেলাই মেশিন কেনা যাবে আট থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে। আর ডাইস মেশিন কিনতে খরচ পড়বে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতিবার ডাইস বানাতে খরচ হবে এক থেকে তিন হাজার টাকা। এক গজ চার গিরা করে একেকটা চামড়া কেনা যাবে এক হাজার ৫শ থেকে এক হাজার ৮শ টাকার মধ্যে। একই মাপের রেক্সিন ৭শ টাকা। বুক্কা বা কাগজের বোর্ড ৩শ টাকা, তিন স্তরে বানানো বেল্টের নিচের অংশের চামড়ার দাম পড়বে ৫শ টাকার মতো। আঠা দুই কেজির বোতলের দাম ৭শ টাকা। বেল্ট হয় তিন রকমের- শুধু চামড়ার, চামড়া ও রেক্সিনের ও শুধুই রেক্সিনের। চামড়ার বেল্টগুলো চামড়া কেটে সাইজ করে তার এক মাথায় বকলেস লাগালেই হয়ে গেল। কখনো কখনো ডাইস মেশিনের ছাপ দিয়ে নকশা করা হয়। চামড়া-রেক্সিনের তৈরি বেল্টগুলোর ওপর দিকে থাকে চমড়া আর নিচের অংশে রেক্সিন। দুইপাশ সেলাই দিয়ে বকলেস লাগালেই প্রস্তুত হয়ে যায়। আর রেক্সিনের বেল্টগুলোর কাজ হয় কয়েক স্তরে। বেল্টের মাপমতো কাগজ কেটে তার দুই পাশে রেক্সিন দিয়ে মুড়িয়ে আঠা লাগাতে হয়। তারপর সেলাই করতে হয়। সবশেষে বকলেস লাগিয়ে দিতে হয়। তবে কোম্পানির নাম খোদাই করতে চাইলে ডাইসের বকলেস রেখে ছাপ দিতে হবে। বেল্ট প্রস্তুতকারক কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, একজন লোক দৈনিক ৫০টি বেল্ট বানাতে পারে। পাইকারিভাবে প্রতিটি চামড়ার বেল্ট ১২০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়, রেক্সিন-চামড়ার বেল্ট বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। আর শুধুই রেক্সিনের বেল্ট বিক্রি করা যায় ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। আর প্রতিটি বেল্টেই ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ থাকে।

ব্যাগ, জুতো বা বেল্ট অনেক রকম উপকরণ দিয়ে তৈরী হলেও চামড়ার তৈরী জিনিসের আভিজাত্যই আলাদা।তাই সব বয়সের মানুষই চামড়ার তৈরী বিভিন্ন জিনিসের প্রতি যথেষ্ট অনুরক্ত।অনেক বছর আগে প্রথম যখন জুতো তৈরী হয়েছিল সেটা চামড়া থেকেই হয়েছিল তবে বর্তমানে চামড়া ছাড়াও অনেক রকম উপকরণ দিয়ে জুতো, ব্যাগ, বেল্ট , ঘড়ির ব্যান্ড, ডায়রির কভার এই জিনিস গুলি তৈরী হয়। অন্যতম প্রবীণ শিল্প গুলির মধ্যে চামড়া শিল্প একটি। আর বৰ্তমানে এই দেশের লেদার টেকনোলজি এতই উন্নত এবং আকর্ষণীয় যে এই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও উচ্চ দামে চামড়ার জিনিসগুলি পাড়ি দিয়েছে। সাবেকি ডিজাইনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মও চামড়া দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করার ফলে ডিজাইনে এবং শৈলী তে নতুনত্ব আসছে আবার কোথাও কোথাও নতুন পুরোনো মিলিয়ে ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট ও তৈরী হচ্ছে।

দেশীয় বাজারের পাশাপাশি চামড়া প্রোডাক্টের একটা আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। আমেরিকা, জাপান, হংকং এবং ফ্রান্সের মত দেশ গুলো মূলত চর্মজাত দ্রব্যের খরিদ্দার যথেষ্ট। উন্নত মানের কাজ দেখাতে পারলে এই আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। চামড়াজাত দ্রব্য যেমন বাড়ি থেকে বিক্রি করা যায় তেমনই দোকান থেকেও বিক্রি করা যায়। তাই তোমাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমে দোকান এর আয়োজন না করতে পারলে বাড়িতেও যদি ভালো কালেকশন রাখতে পারো সেখান থেকেই তোমার ব্যবসা বাড়তে থাকবে। যে কোনো দোকানের কালেকশনই তার প্রধান আকর্ষণ। তাই সব রকম দামের সব রকম বয়সের জন্যে জুতো, চটির কালেকশন রাখতে হবে। ধীরে ধীরে বেল্ট, ব্যাগের কালেকশনও রাখতে পারো। জুতোর বা চটির ক্ষেত্রে সাইজও অনেকটা ম্যাটার করে। কোথা থেকে তোমার ব্যাবসার আইটেম গুলো কিনবে সেটা এবার ঠিক করো। তোমার আশেপাশে কোথায় জুতো তৈরী করার কারখানা আছে সেইসব খবর নাও। কোন জায়গা থেকে সঠিক মানের পাইকারি জুতো পাবে, তাদের কিভাবে পেমেন্ট করবে সব প্রথমে প্ল্যান করে একটা জায়গায় নোটডাউন করতে পারো। এরপর তোমার ব্যবসার প্রচার করার জন্যে তোমাকে বিভিন্ন এক্টিভিটি করতে হবে। তার জন্যে প্রথমেই অনলাইন ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারো , সোশ্যাল সাইটগুলোতে তোমার ব্যাবসার বিজ্ঞাপন দিতে পারো। যেখানে তোমার ব্যবসা করবে কয়েকটা ছোট খাটো পোস্টার দিতে পারো।

শেষ কথা:

বেল্ট তৈরির ব্যবসা স্বল্প বিনিয়োগে শুরু করে দ্রুত লাভবান হওয়া সম্ভব। এই ব্যবসায় চাহিদা সবসময় বিদ্যমান থাকে, কারণ এটি দৈনন্দিন পোশাকের একটি অপরিহার্য অংশ। বাংলাদেশে সহজলভ্য কাঁচামাল ও দক্ষ কর্মীর সমন্বয়ে বেল্ট তৈরির এই ক্ষুদ্র ব্যবসা বড় বাজারে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে বেল্টের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকার ফলে এই ব্যবসায় সম্ভাবনা আরও বেশি।

Related Post